রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যে ৫ টি খাবার অবশ্যই খাবেন

বর্তমান সময়ে আমরা সবাই  স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ সচেতন। আর প্রতিদিনের খাবারের পুষ্টিগুণ নিয়ে মানুষের

সচেতনতা বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাবারের তালিকায় এখন বেশ জনপ্রিয় এবং কার্যকরী ৫ তা

উপাদান হলো চিয়া সীড, মরিঙ্গা, অশ্বগন্ধা, ত্রিফলা এবং মেথি গুঁড়ো’। আসুন জেনে নেই এর কি কি উপকারিতা

রয়েছে।

ত্রিফলা

ত্রিফলা বলতে আমরা আমলকী, হরীতকী এবং বহেড়া এই তিন ফলের মিশ্রণকে বুঝি। বস্তুত ত্রিফলা শব্দের

আক্ষরিক অনুবাদ করলে দাঁড়ায় “তিনটি ফল”(ত্রি=তিন এবং ফলা=ফল)। তিন ফলের মিশ্রণ, তাই এর নামকরণ

করা হয়েছে ত্রিফলা। শাঙ্গধর সংহিতা অনুসারে ত্রিফলা হলো এক ভাগ হরীতকী, দুই ভাগ বহেড়া এবং চার ভাগ

আমলকীর মিশ্রণ। এই অনুপাতে (১:২:৪) তিন ফলের চূর্ণ ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে ত্রিফলা চূর্ণ তৈরি হয়। এতে

প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে যা আমাদের ছোট-বড় নানা রোগ থেকে মুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা

পালন করে থাকে।

ত্রিফলা সেবনে যেসকল উপকারিতা রয়েছে 

হজমের উন্নতি এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি অপসারণে সহায়তা করে। ত্রিফলায় ভিটামিন সি এবং অন্যান্য

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত

হয়েছে  ত্রিফলা সেবনে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে।


ত্রিফলা চুলের সুরক্ষাকারী গুণাবলীর জন্য পরিচিত চুল পড়া, অকালে চুল পাকা এছাড়াও চুলের পুষ্টি যোগাতে

গুরুত্ব পূর্ণ  ভূমিকা রাখে। শীতে ত্বক ভালো রাখতে ত্রিফলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মরিঙ্গা 

সজনে বা মরিঙ্গা আমাদের নিকট একটা জনপ্রিয় সবজি। সজনের বৈজ্ঞানিক নাম (Moringa oleifera)। এটার

উৎপত্তি স্থল ভারত উপমহাদেশে হলেও এটা এখন সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। একে পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব বলা

হয়। এটাতে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল থাকে। এই মিনারেল গুলো আমাদের শরীরে সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি।

ম্যাগনেসিয়াম জিংক পটাশিয়াম এছাড়াও আমাদের শরীরে অনেক হরমোন থাকে যা মরিঙ্গা বা সজনে পাতা

নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে। 


যারা ডায়াবেটিস, বহুমূত্র বা হাইপার টেনশন রোগে ভুগছেন তাদের জন্য সজনে পাতার গুঁড়া খুবই উপকারি।

আপনার সুগার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ন্যাচারাল এই সজনে পাতার গুঁড়া প্রতিদিন এক চা চামচ করে খেতে পারেন।

যাদের হাত পা জ্বালা পোড়া করে ত্বক নষ্ট হয়ে যায় বা ব্রণের সমস্যা রয়েছে তারা সজনে পাতার গুঁড়া পানির সাথে

মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে এটা অনেক ভাবে খেতে পারবেন।

মরিঙ্গা সেবনে যেসকল উপকারিতা রয়েছে 

মারিঙ্গা সেবনে শরীরের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা সহজ হয়ে যায়। এছাড়াও

মারিঙ্গাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক। এটি  পালংশাকের চেয়ে তিন গুণ বেশি আয়রণ বিদ্যমান, যা এ্যানেমিয়া

দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।


শরীরের ওজন কমাতে ব্যায়ামের পাশাপাশি এটি বেশ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। মারিঙ্গা যকৃত ও কিডনী সুস্থ্য

রাখতে এবং রূপের সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবে বহু কাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে।

চিয়া সীড

পুষ্টিকর খাবারগুলোর মধ্যে চিয়া সিড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রাচীন অ্যাজটেক জাতি একে সোনার চেয়েও

মূল্যবান মনে করতো। ‘সালভিয়া কলম্বিয়ারিয়া’ নামের উদ্ভিদের ফুল থেকে মূলত চিয়া সিডস পাওয়া যায়। তবে

মেক্সিকো ও আমেরিকায় মূলত এই উদ্ভিদ বেশি পাওয়া যায়। 


বীজগুলো ছোটো হলেও পানিতে বা তরলে ভিজিয়ে রাখলে এর ওজনের প্রায় ১২ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

চিয়া সিডে আছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং ভিটামিন। সিডস দিয়ে নানা ধরনের খাবার যেমন- জেলি, পুডিং

বানানো সহজ হয়।

চিয়া সিডস সেবনে যেসকল উপকারিতা রয়েছে 

চিয়া সিডস এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী

করে। চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ হৃদরোগের ঝুঁকি ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের

মতে, মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি উচ্চমাত্রার প্রোটিন আছে চিয়া সিডে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত

প্রয়োজনীয় ও উপকারী।


দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় চিয়া সিডে। যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং মজবুত করে তুলতে

বিশেষ উপকারী। গবেষকদের দাবি, চিয়া সিডে এ স্যালমন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড

রয়েছে। যা হৃদরোগের ঝুঁকি ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে।


চিয়া সিড ব্লাড সুগার (রক্তের চিনি) স্বাভাবিক রাখে, যা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়া চিয়া সিড শরীর

থেকে বর্জ্য পদার্থ বের হতে সাহায্য করে,গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে।

পাশাপাশি এটি ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে।

মেথি গুঁড়ো

মেথি একটি বর্ষজীবী গাছ. মেথি (বৈজ্ঞানিক নাম: Trigonella foenum-graecum) একটি মৌসুমী গাছ। এটি ভারত,

পাকিস্তান, বাংলাদেশ, এবং আফ্গানিস্তানে ভালো জন্মে। একবার মাত্র ফুল ও ফল হয়। তিনটি করে পাতা একসাথে জন্মায়। মেথি শাক গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে খুব প্রিয় একটি খাদ্য এবং বাদামি-হলুদ বর্ণের প্রায় চারকোনা আকৃতির বীজ হয়। 


মেথিতে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, আয়রন, কপার,

ভিটামিন ‘সি’, নিয়াসিন ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও এতে রয়েছে ডায়োজেনিন এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হরমোন।


 মেথি গুঁড়ো সেবনে যেসকল উপকারিতা রয়েছে

মেথিকে বলা হয় ডায়াবেটিসের মহৌষধ। রক্তে যাঁদের সুগার বা চিনির মাত্রা অনেক বেশি, তাঁরা মেথি খেলে

উপকার পাবেন। লেবু ও মধুর সঙ্গে মেথিদানার গুঁড়া মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা উপশম করে।

রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে বা রক্তে চর্বির পরিমাণ কমাতে দারুণভাবে কার্যকর এই মেথি। সকালে খালি পেটে

মেথি চিবিয়ে খেলে কৃমি দূর হয়।


প্রতিদিন খালি পেটে সকালে মেথি খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি ঘটে। যাঁরা বেশি ওজন নিয়ে ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি

বেশ উপকারী। মেথি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরকে রাখে সতেজ। রক্তের উপাদানগুলোকে করে উদ্দীপ্ত।

অশ্বগন্ধা

অশ্বগন্ধা বা উইন্টারচেরী ( Winter cherry) কে বলা হয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের নয়নমণি। অশ্বগন্ধার বৈজ্ঞানিক নাম

‘Withania somnifera’। আয়ুর্বেদে একে বলা হয় বলদা ও বাজিকরি। প্রায় ৩০০০ বছর ধরে অশ্বগন্ধা একটি

গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অশ্বগন্ধায় উপস্থিত আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং

প্রোটিন। এছাড়াও ৩৫ ধরনের ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান থাকে যার ফলে সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করলে এটি

ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা ভারতের শুষ্ক অঞ্চলে চাষ করা হলেও এখন এটি নেপাল, চীন  এবং

ইয়েমেনে চাষ করা হয়।

অশ্বগন্ধা গুঁড়ো সেবনে যেসকল উপকারিতা রয়েছে

  • শুক্রাণু তৈরিতে অশ্বগন্ধা খুব ভালো কাজ করে। 
  • অশ্বগন্ধার গুঁড়া পরিমাণ অনুযায়ী খেলে ভালো ঘুম হয়।
  • এটি সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
  • চোখের ব্যথা দূর করতে বিশেষ উপকারী এটি।
  • হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অশ্বগন্ধা অনেক উপকারী। পেট ফাঁপা এবং পেটের ব্যথা নিরাময় সহ
          যকৃতের জন্য ভীষণ উপকারী অশ্বগন্ধার গুঁড়ো।
  • অশ্বগন্ধায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান থাকার ফলে এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক
           সাহায্য করে।


Post a Comment

Previous Post Next Post