৫ টি রোগের ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম এবং যেসকল উপকারিতা পাওয়া যাবে

৫ টি রোগের ক্ষেত্রে  ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম , Psyllium Husk
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম



ইসবগুলের ভুসি  আমাদের সবার কাছে পরিচিত। সেই সাথে এর উপকারিতাও অনেক। কিন্তু উপকারী এই খাবার আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে খেতে চাই না। অথচ এটি আমাদের সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বেশ ভালোভাবে ভূমিকা রাখে। ইসবগুলে রয়েছে অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। ১ টেবিল চামচ ইসবগুলে থাকে ৫৩% ক্যালোরি, ০% ফ্যাট, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন যা আমাদের শরীরে জন্য উপকারী। 


বেশির ভাগ মানুষ মনে করে ইসবগুলের ভুসি শুধু কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে পারে কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেনা ইসবগুলের ভুসি আরো ৮-১০ টি রোগের উপকারে কার্যকরী। যেমন গ্যাস্টিক চিরতরে দূর করতে পারে। ডায়রিয়া দূর করতে ,প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে, করোনারি আর্টারি ডিজিজ দূর করতে এবং মোটা মানুষের চর্বি গলাতেও  ইসবগুলের ভুসি খুবই  কাজ করে।


কিন্তু আপনি শুধু পানি আর ইসবগুলের ভুসি খেলেই কিন্তু এই সব গুলো রোগের উপকার আপনি পাবেন না। আমরা ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি রাতে পানির সাথে মিশিয়ে সকালে পান করে, কেউ আবার লম্বা সময় ভিজিয়ে রেখে পান করে এই ভাবে যতই ইসব গুলের ভুসি খান না কেন কোনো উপকারে আসবে না।


আপনাকে জানতে হবে এটা খাওয়ার সঠিক নিয়ম, সেই সাথে আপনাকে এটাও জানতে হবে কি বাবে খেলে কোন রোগের উপকার হবে। তাই আমরা আজ আলোচনা করবো ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার বিভিন্ন উপায় দিয়ে। 


গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা


গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুসি উপকারিতা


এসিডিটি প্রতিরোধে বেশির ভাগ মানুষই এন্টাসিড জাতীয় ঔষধ খেয়ে থাকেন।  কিন্তু ইসবগুলের ভুসি খেয়েছেন বলে আমি জানি না। ইসব গুলের ভুসি খাওয়ার পরপরই এটি আমাদের পাকিস্থলির ভিতরে গিয়ে একটি প্রতিরক্ষা মূলক ত্বক তৈরি করে, যা গ্যাস্টিক বৃদ্ধি পাওয়া থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করে।  এছাড়াও এটি  হজমের জন্য এবং পাকস্থলীর বিভিন্ন এসিড নিঃসরণের সহায়তা করে। 


গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম


তাই গ্যাস্টিক কমাতে খাওয়ার পর দুই চামচ ইসবগুলের ভুসি আধা ক্লাস ঠান্ডা পানিতে অথবা দুধে মিশিয়ে পান করুন। এক্ষেত্রে দুধ এবং পানি এক সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি  পাকিস্থলির অত্যাদিক এসিড কমাতে সাহায্য করে, এবং গ্যাস্টিকের মাত্রা কমিয়ে দেয়।  

ওজন কমাতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম


ওজন কমাতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা


আপনি জেনে অবাক হবেনা ইসবগুলের ভুসি মানুষকে মোটাও করতে পারে আবার চর্বি গলিয়ে  চিকনও  করতে পারে। অর্থাৎ আপনি কোন রোগে কি ভাবে খাচ্ছেন তার উপর নির্বর করে ইসবগুলের কার্যকারিতা বা রোগ প্রতিরোধের বেপারটি। 


আবার যদি আপনার ওজন বেড়ে যায় তাহলে আপনি ইসবগুলের ভুসি খাবেন সেক্ষেত্রে খাওয়ার পদ্ধতিটা আলাদা। ওজন কমানোর উদ্দেশে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অতিউত্তম একটা পদ্ধতি রয়েছে। এটি খেলে লম্বা সময় পেট ভরা থাকবে ফলে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাটাই কমে যাবে।



ওজন কমাতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম


যদি আপনি স্লিম হতে চান তাহেল কুসুম গরম  পানির সাথে ২ চচামচ ইসবগুলের ভুসি  এবং ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভাত খাওয়ার আগে খেয়ে নিন। অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠেও ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি ১ ক্লাস কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।


তাহলেও কিন্ত ওজন কমবে। ওজন কমানো শরীর থেকে চর্বি ঝরানো অবশ্যই গরম পানি এবং লেবুর রসের সাথে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেতে হবে। পাকস্থলী পরিষ্কার হবে এবং শরীর থেকে চর্বি জোড়বে। 


কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা


কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা 


যেমন দরুন আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাহলে আপনি কি ভাবে ইসবগুলের ভুসি খাবেন? কোষ্ঠকাঠিন্য একটি দুরহ রোগ আর এই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ এত টা ভয়াবহ পর্যায় পৌঁছায় যে শেষ পর্যন্ত মানুষকে অপারেশন করতে হয়। তার পরেও ভালো হয় না। তবে ইসব গুলের ভুসি আপনাকে কয়েক দিনের মধ্যেই এ রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। তবে খাওয়ার পরিমাপ এবং পদ্ধতিটাই কিন্তু এখানে মুখ্য বিষয়। 


দেখুন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি পাকিস্থলীতে গিয়ে ফুলে বিতরের সব বর্জ্য বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিক ভাবে জলব্ৰাহী হওয়ার কারণে পরিপাকতন্ত্র থেকে পানি গ্রহণ করে মলের ঘনত্বকে বাড়িয়ে দিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ইসবগুলের ভুসি।


কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম


কষ্টকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি খেতে হবে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার  আগে এবং অবশ্যই খেতে হবে হালকা কুসুম গরম দুধের সাথে মিশিয়ে।  


ডায়রিয়া দূর করতে ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা

ডায়রিয়া দূর করতে ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা 


অবাক লাগলেও এটি সত্যি যে ইসব গুলের ভুসি ডায়রিয়া এবং কোষ্টকাঠিন্য দুটি এক সাথে রোদ করতে পারে। যদি ডায়রিয়া হয় তাহলে দুধ অথবা পানির সাথে নয় তখন খেতে হবে টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে। তাহলে ত্বকদই এর সাথে ইসবগুলের ভুসি মিশালে কি ঘটে? টক দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক যা পাকস্থলীর ইনফেকশন সারাতে এবং ইসবগুলের ভুসি তরল মূল কে শক্ত করতে সাহায্য করে খুব কম সময়ে। 


ডায়রিয়া দূর করতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম


ডায়েরিয়া ভালো করতে ৩ চামচ টক দইয়ের সাথে ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসি  মিশিয়ে খেয়ে নিন।  এভাবে দিনে ২ বার খেলে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।



প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে


প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকে অনেকের। তাদের ক্ষেত্রে উপকারী একটি খাবার হলো ইসবগুলের ভুসি। এটি নিয়মিত খেলে কমবে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা। এই সমস্যা দূর করতে আখের গুড়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এটি সকাল ও বিকালে খেতে পারেন। এভাবে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।


শরীর কে চাঙ্গা রাখতে এটি উপকারী 


আবার আশাযাক আপনি যদি খুব রোগা হয়ে থাকেন তাহলে নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধের সাথে মিশিয়ে পান করুন। কেননা ইসবগুলের ভুসি হজমে সহায়তা করে এবং খাদ্যের রুচিকে বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ আপনি যদি কম খেতে পারেন খাবারে যদি রুচি না থাকে হজমে সমস্যা থাকলে স্বাস্থ্য ভেঙে যায় তাহলে সেটি দূর করে দিবে ইসবগুলের ভুসি। 


ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার আগে 2 বিষয় মাথায় রাখতে হবে

  1. ইসবগুলের ভুসি দীর্ঘ সময় ভিজিয়ে রেখে কখনোই খাবেন না সর্বোচ্চ সময় ১০ থেকে ১৫ মিনিট এর মাঝেই খেয়ে নিবেন। 
  2. এটি কখনোই খোলা অবস্থায় কিনবেন না অর্থাৎ প্যাকেট জাতীয় ইসবগুলের ভুসি কিনবেন, ইদানিং বাজারে যেসমস্ত গন্ধযুক্ত অর্থাৎ ফ্লেবার মেশানো ইসবগুলের ভুসি পাওয়া যায় সেগুলো ভুলেও কিনবেন না। গন্ধ মুক্তু এবং প্যাকেট জাতীয় ইসবগুলের ভুসিতে সঠিক উপকার টি পাবেন। বুঝে শুনে একটু ভালো মানের টি  কিনার চেষ্টা করবেন দাম যদিও একটু বেশি হয়।


Post a Comment

Previous Post Next Post