তালবিনা প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর সুন্নতি খাবার, কেন তিনি এটি খেতে বললেন?

তালবিনা/ talbina  recipe

তালবিনা হচ্ছে যব বা বার্লি। দুধ, মধু, ময়দা ইত্যাদির সহযোগে তৈরি করা এক ধরনের জাউ চাইলে খেজুর এবং কিছু ড্ৰাই ফ্রুটস যোগ করা যেতে পারে। যব পিষে দুধে পাকিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে এটা তৈরি করা হয়। আমরা জানি বার্লি দুধ মধু খেজুর সবগুলোই এক একটি সুন্নাত খাবার এবং প্রতিটিই নিজস্ব গুণাবলী ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এছাড়াও তালবিনাতে থাকে ভিটামিন-বি, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফরফরাস, জিংক, ফসফরাস, কপার, পটাশিয়াম ক্রোমিয়াম এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। রসূলুল্লাহ সাঃ তালবিনা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। 


রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, 

তার পরিবারের কোন ব্যক্তি মারা গেলে মহিলারা এসে জর হলো। তার পর তার আত্মীয়রা ও বিশেষ ঘনিষ্ঠ মহিলারা ছাড়া বাকি সবাই চলে গেলেন। তিনি তালবিনা রান্না করতে বললেন। তা রান্না করা হলো।  এরপর 'সারিদ' (গোশতের মধ্যে রুটির টুকরো দিয়ে তৈরী খাবার) প্রস্তুত করা হলো এবং তাতে তালবিনা ঢালা হলো। তিনি বললেন, "তোমরা এ থেকে খাও কারণ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, তালবিনা রুগ্ন ব্যক্তির হৃদয়ে প্রশান্তি আনে এবং শোক দুঃখ কিছুটা দূর করে।" 

(সহীহ বুখারী হাদিস নং ৫৪১৭) (Source)


আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এর পরিবারের লোকেদের জ্বর হলে, তিনি দুধ ও ময়দা সহযোগে তরল পথ্য তৈরি করার নির্দেশ দিতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তিনি বলতেনঃ এটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে শক্তি যোগায় এবং রোগীর মনের ক্লেশ ও দুঃখ দূর করে, যেমন তোমাদের কোন নারী পানি দ্বারা তার চেহারার ময়লা দূর করে। 

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৪৪৫) (Source)


ফলো দিয়ে রাখুন আমাদের গুগল নিউজ


তালবিনা খাওয়ার উপকারিতা

  • তালবিনায় বিদ্যমান পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ উপাদানসমূহের উপস্থিতি যা আমাদের মস্তিষ্কের বার্তাবাহক নিউরোট্রান্সমিটার গুলোর উপর প্রভাব ফেলে, যা হতাশা বা ডিপ্রেশনের মতো মানসিক অবস্থা হ্রাসে সহায়তা করে।
  • এটি  আমাদের খুশি বা প্রশান্তির অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়।
  • এটি বৃদ্ধি প্রাপ্ত শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। এতে উপস্থিত অ্যান্টি-এজিং উপাদান যা হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে।
  • তালবিনায় বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম রক্তে শর্করা এবং ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে। উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় পিত্তথলির পাথর রোধে ভূমিকা রাখে।
  • তালবিনা সেবনে  অসুস্থ ব্যাক্তির হৃদয়ে প্রশান্তি আনে ও কষ্ট কমিয়ে দেয়।
  • এতে বিদ্যমান বিটা-গ্লুকানের পরিমাণ বেশি থাকে, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
  • সহায়তা করে।
  • তালবিনায় ক্রোমিয়ামের উৎস ভালো থাকে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখে।
  • এটি অসুস্থ হার্টের জন্য প্রতিষেধক স্বরুপ এবং কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়।
  • এবং আমাশয় রোগীদের জন্য অনেক উপকারী কারণ এটি আমাশয় কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  • এছাড়াও পেটের জ্বালাপোড়া দূর করে, হজমে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। 


তালবিনা বানানোর নিয়ম 


উপকরণ:

  • এক কাপ পরিমাণ গম। (চাইলে ব্লেন্ডার করে গম গুলো টুকরো করে নিতে পারেন)।
  • দশ থেকে বারোটা টা খেজুর (বিচি ফেলে দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে নিবো)
  • এক লিটারের মতো গরুর দুধ।
  • হাফ কাপ চিনি স্বাদ মতো (চাইলে ব্যবহার নাও করতে পারেন)।
  • কাপের এক তৃতীয়াংশ কিসমিস।
  • চাইলে ড্রাই ফ্রুটস ব্যবহার করতে পারেন যেমন কাঠবাদাম, চিনাবাদাম ইত্যাদি।
  • পরিমাণ মতো মধু

প্রস্তুত প্রণালী


গম ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখবো। এটা পরিপূর্ণ ভিজে গেলে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যেতে পারে। একটা পাত্রে দুধ নিয়ে ৫ মিনিটের মতো জাল দিয়ে নিবো এবং নাড়তে থাকবো যেন উপচে না আসে। 


এরপরে সেই ভিজে রাখা গম দিয়ে দিবো। এটা শুরুতেও দিতে পারেন  কারণ এটা সিদ্ধ হতে সময় লাগে, তবে ২০ মিনিট এর মতো সময় লাগতে পারে। 

এই পর্যায় দুধ এবং গম কিছুটা গণ হয়ে আসবে সেই সময় চিনি, টুকরো করা খেজুর, কিসমিস, দিয়ে দিবো। চাইলে সাথে কাঠবাদাম, চিনাবাদাম এবং অনেক ধরণের ড্রাই ফ্রুটস ব্যবহার করতে পারেন। এক সাথে কিছুক্ষন জাল দিলে এটা প্রস্তুত হয়ে যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন লেগে না যায়। পরিবেশন করার সময় পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে নিন 


Post a Comment

Previous Post Next Post