স্পিরুলিনার উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম

স্পিরুলিনার উপকারিতা ও খাওয়ার সঠিক নিয়ম

স্পিরুলিনা হল এক প্রকার বহুকোষী নীলাভ-সবুজ শৈবালজাতীয় ছোট জলজ উদ্ভিদ। এটি সাধারণত পানিতেই জন্মে। তবে এটি সামুদ্রিক শৈবাল হিসাবে সবার কাছে বেশি পরিচিত। স্পিরুলিনা নামটি এসেছে মূলত ল্যাটিন শব্দ Spira থেকে। এর অর্থ হলো সর্পিলাকার বা পাকানো। এর তিনটি প্রজাতি রয়েছে Arthrospira platensis, Fusiformis এবং Maxima।  Maxim প্রজাতির স্পিরুলিনা ক্যালিফোর্নিয়া এবং মেক্সিকোতে পাওয়া যায়।

Arthrospira platensis সর্বাধিক বিস্তৃত তবে আফ্রিকাতে এবং এশিয়াতে বেশি পাওয়া যায়। স্পিরুলিনা মহাকাশ মিশনে যাওয়ার জন্য মহাকাশচারীদের খাদ্য তালিকার অংশ হিসেবে NASA এর সফলভাবে ব্যবহার করার পরথেকে এটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এই উদ্ভিদ সাধারণত সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করে থাকে।

এটাকে সুপারফুড বলা হয় কারণ এটাতে অনেক ধরণের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। এতে মাছ ও গরুর মাংসের তুলনায় তিন গুণ এবং ডিমের তুলনায় ছয় গুণ বেশি প্রোটিন থাকে। গাজরের তুলনায় পাঁচ গুণ ও পালং শাকের তুলনায় চল্লিশ গুণ বেশি ক্যারোটিন রয়েছে এবং দুধের তুলনায় দশ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে। এছাড়াও গরুর মাংসের তুলনায় ত্রিশ গুণ বেশি আয়রন থাকে।


স্পিরুলিনার উপকারিতাঃ

  • স্পিরুলিনাতে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোফিল উপাদান রয়েছে। যা রক্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিমোগ্লোবিনে রূপান্তরিত হতে পারে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া স্পিরুলিনাতে ভিটামিন বি, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও অ্যামিনো এসিড রয়েছে। যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
  • এতে বেশি পরিমাণে প্রোটিন ও ভিটামিন বি১২ রয়েছে যা নিরামিষ ভোজীদের এ দুটি পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি কমায়। কারণ তাদের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন ও ভিটামিন বি১২ অনুপস্থিত থাকে।
  • শিশু বিশেষজ্ঞরা বাচ্চাদের সব সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কিন্তু সব সময় এটি সম্ভব হয়ে উঠে না আবার বাচ্চারা খেতেও চায় না। পুষ্টি সমস্যা পুরুনে স্পিরুলিনা এক্ষেত্রে ভালো ভুমিকা রাখে। 
  • এতে প্রচুর ক্লোরোফিল ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা রক্তের দূষক পদার্থসমূহ দূর করে এবং রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
  • এতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
  • উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমায়।
  • ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট বা মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করতে সাহায্য করে 
  • যারা খুব বেশি দুর্বলতা অনুভব করে থাকেন তারা সতেজ থাকার জন্য স্পিরুলিনা সেবন করতে পারেন। 
  • যারা মনে রাখতে পারেন না, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি তাদের জন্য এটা খুব উপকারী। 


স্পিরুলিনা যেভাবে খেতে পারেন 

স্পিরুলিনা যেভাবে খেতে পারেন

  • শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এএফএম জামাল উদ্দিন বলেন এটা কোন মেডিসিন না। এটা একটা সাপ্লিমেন্টারী ফুড। এটার কোন নিজস্ব স্বাদ নেই। যেকোন খাবারের সঙ্গে এটি খাওয়া যায়।
  • আপনি যেকোনো ভাবে এটা খেতে পারেন। জুস্ করে খেতে পারেন, চায়ের সাথে মিশিয়ে, যেকোনো ভর্তা/তরকারি শাক সবজি বা সালাদের সাথে সামান্য পরিমাণ মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • বাচ্চাদেরকে  দুধ ভাতের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
  • এছাড়া রুটি, আলুভর্তা, নুডলস্, শরবত, হালুয়া ইত্যাদিতে স্পিরুলিনা মিশিয়ে নানা খাবার তৈরি করে খেতে পারেন।
  • আপনি যদি দ্রুত ওজন কমাতে চান তাহলে স্পিরুলিনা হতে পারে ভালো প্রতিকার। এক গ্লাস পানির সাথে দুই টেবিল চামচ স্পিরুলিনা পাউডারে এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।


স্পিরুলিনা ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম

স্পিরুলিনা ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম

  • বয়স ০৩-১৬ বছর হলে- প্রতিদিন সকালে ১টি ক্যাপসুল এবং  রাতে ১টি ক্যাপসুল খাবেন খাবার খাওয়ার পর।
  • বয়স ১৬-৪০ বছর হলে- প্রতিদিন সকালে ১টি ক্যাপসুল এবং রাতে ১টি ক্যাপসুল খাবেন খাবার খাওয়ার পর।
  • বয়স ৪০+ বছর হলে- প্রতিদিন সকালে ২টি ক্যাপসুল এবং রাতে ২টি ক্যাপসুল খাবেন খাবার খাওয়ার



Post a Comment

Previous Post Next Post